পাঠাগারকে সঙ্গী করে সন্তানকে আলোকিত করুন

Spread the love

আমাদের দেশে এখনো কেন মার্ক জাকারবার্গ ( ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা), ড. মার্টিন কুপার এবং ফ্রান্সিস মিচেল ( মোবাইল আবিষ্কারক), স্টিভ জবস ( iphone প্রতিষ্ঠাতা), টমাস এডিসন বা টমাস আলভা এডিসন (গ্রামোফোন, ভিডিও, ক্যামেরা এবং দীর্ঘস্থায় বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারক) আইনস্টাইন, বিল গেটস কেন তৈরি হয় না, জানেন?

কারন আমাদের দেশে, A+ না পেলে কাউকে ছাত্র হিসেবে ধরাই হয় না!! এবং যারা এর থেকে কম মার্ক বা খারাপ রেজাল্ট করে, তাদেরকে আমরা ধরেই নেই এদের মাঝে কোন প্রতিভা নেই!

শিক্ষা – শাস্ত্রের একজন জগত বিখ্যাত ফরাসি শাস্ত্রী বলেছেন যে, এক সময় ফরাসি দেশে শিক্ষা পদ্ধতি এতই বেয়ারা ছিল যে, সে যুগে France was saved by her idlers ; অর্থাৎ যারা পাশ করতে পারেনি বা চায়নি তারাই ফ্রান্সকে রক্ষা করেছে। (সূত্র : ‘বই পড়া’, লেখক প্রমথ চৌধুরী)

এর মানে এটা নয় যে, আমরা আমাদের রেজাল্টের দিকে নজর দিব না। বর্তমান সময়ে রেজাল্ট বা সার্টিফিকেট অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট। সেটাও আমাদেরকে মনে রাখতে হবে। তবে রেজাল্ট খারাপ হতেই পারে, এটা নিয়ে সামাজিকভাবে যে একটা চাপ পড়ে তা সত্যিই অকল্পনীয়। এবং তার সাথে সাথে আমাদের অনেক পরিবারেই দেখা যায় রেজাল্ট খারাপ হলে সন্তানকে নানা ভাবে মানসিকভাবে প্রেশার দেওয়া হয়! এটা সত্যিই দুঃখজনক।

এই ধরনের মা বাবা বা পরিবারের উদ্দেশ্যে আমার কিছু কথা। আমি প্রথমেই বলে নিচ্ছি, আপনাদের জ্ঞান দেয়ার মত যোগ্যতা আমার নেই, তবুও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলছি।

‘success’ এটা হল একটা রিজিকের মত, এটা উপর থেকে নাযিল হয়। আমরা মানুষরা শুধু চেষ্টাই করে যেতে পারি, এর বাইরে কিছুই করতে পারি না। তবে হ্যাঁ, পরিশ্রম এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়া দুটো সমান থাকার পরেও যদি আমরা না পেয়ে থাকি তাহলেও আমাদের উচিত না সন্তানকে প্রেসার দেয়া বা বকা-ঝকা করা। কারণ আমরা সবাই জানি, “আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।” তবে একটা মানুষ যে চেষ্টা করেছে, সেটা সেলিব্রেট করুন। এখন চেষ্টার পরেও যে পায়নি সেটা আল্লাহর হাতে, মানুষের হাতে নয়। তাই এই যে চেষ্টা বা পরিশ্রম সেটাকে উপভোগ করুন। তাই সন্তানের পাশে থাকুন। সন্তানকে প্রেসার না দিয়ে, তাদের বোঝার চেষ্টা করুন, তারা কি হতে চায় সেটা জানুন বুঝুন। সন্তানদের সাথে ফ্রি হন। দেখবেন আপনার ছেলে বা মেয়ে আপনি যে আশা করেছেন তার থেকেও আল্লাহর রহমতে অনেক বড় হয়েছে।

একটা মানুষ কখন পুরো পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করতে পারে জানেন?
যখন ওই মানুষটার পরিবার তার পাশে থাকে, সাপোর্ট করে তখন।

আমাদের অনেক পরিবারে আছে, যারা মনে করে একাডেমিক বই ছাড়া বাইরের বই পড়লে সময় নষ্ট হয়! বিশেষ করে , গ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ এটাই মনে করে। এখন তাদের এই ভুল ভাঙ্গানোর জন্য আমি বাস্তব একটা উদাহরণ নিচ্ছি।

উদাহরণ : আমার প্রথম লেখাটি যারা পড়েছেন (প্রথম লেখা শিরোনাম : আমি লাইব্রেরি মানে বুঝতাম স্কুল-কলেজের টিচার রুম!) তারা নিশ্চয়ই এই লাইনটি পেয়েছেন “আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে লেখাপড়ায় তেমন একটা মনোযোগে ছিলাম না।” কথাটা কিন্তু ১০০ পার্সেন্ট সত্যি। তখন আমার পরিবার বিশেষ করে আমার বড় ভাইয়া (ইশতিয়াক আহমেদ সাব্বির) সে আমাকে নানাভাবে পাঠাগারের বই পড়ার পরামর্শ দিতেন। এবং তার পরামর্শ মত আমি চলার চেষ্টা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, পাঠাগারের বই পড়ে আমার একাডেমিক পড়াশোনায় ফোকাস এসেছে এবং পাঠাগারের বই দিয়ে অনেক কিছু শিখতেও পেরেছি, জানতেও পেরেছি, বাস্তবিক অভিজ্ঞতা থেকেও অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এবং আমি বিশ্বাস করি, এই পাঠাগার থেকে শুধু আমি নই, আমার মত আরও অনেকে এভাবে উপকৃত হয়েছে।

তাই আমার মতে, যারা মনে করেন, এ বই ভালো না বা কোন উপকারে আসে না, তারা দয়া করে এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।

আসুন আমরা সবাই সচেতন হই, নিজে, পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।

আমরা অনেকেই মনে করি, সরকার দেশ উন্নত করে বা সরকারই পারে একটি দেশকে উন্নত করতে। কিন্তু নাহ, দেশকে উন্নত করতে পারে ওই দেশের জনগণ। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত সবদিক থেকে সচেতন হওয়া। আমরা সচেতন মানে পুরো বাংলাদেশ সচেতন!

আসুন বই পড়ি,
কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসে।
একটি সুস্থ ও সুন্দর দেশ গড়ে তুলি।
ধন্যবাদ ❤️

লেখাঃআসপিয়া বিনতে লতিফ
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top