বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা

Spread the love

যদি করেন নিয়মিত রক্ত-দান,
রক্তের অভাবে ঝরবে না একটিও প্রাণ।
নেই হারাবার ভয়
করি নতুন প্রাণের সঞ্চয়।
একের রক্ত বইছে অন্যের শিরায়
এইতো মানবতার পরিচয়।
আমার রক্তে যদি বেঁচে যায় একজন মুমূর্ষ রোগীর প্রাণ,
তবে আমি কেন করবোনা স্বেচ্ছায় রক্তদান।

অদ্ধকার আয়োজিত আলোর ফেরীর জুন মাসের আড্ডা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা।

স্বেচ্ছায় রক্তদান এক মহৎ কাজ। রক্তের অভাব একজন ব্যক্তির জীবনকে বিপদে ফেলতে পারে। রক্তের প্রয়োজনে সময়মতো রক্ত সরবরাহ করা না হলে জীবনও হারাতে পারে।

রক্ত মানব দেহের এমনই একটি উপাদান যেটা একজন ব্যক্তি অনেক ধনসম্পদ থাকতে পারে অনেক ধনসম্পদ থাকলেও তিনি তার প্রয়োজনে ও সময়মত রক্ত পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত একজন রক্তদাতা স্বেচ্ছায় রক্তদান না করবে। মূলত এই রক্তদাতাদের উৎসাহিত করা এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত হয়। এর মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা হয়, যেন রক্তের অভাবে কোনো রোগীর মৃত্যু না হয়।

রক্তদাতা দিবস সর্বপ্রথম ১৯৯৫ সালে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়। এরপর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়।

প্রতিবছর রক্তদাতা দিবসের একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে একটি নির্দিষ্ট দেশকে দায়িত্ব দেয়া হয় পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। তারাই ধারাবাহিকতায় এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়-‘গিভ ব্লাড, গিভ প্ল্যাজমা, শেয়ার লাইফ, শেয়ার অফেন’। অর্থাৎ ‘রক্ত দান করুন, দান করুন প্লাজমা, যতবার সম্ভব গ্রহণ করুন জীবন বাঁচানোর এ অনন্য সুযোগ’ এবং এ বছর বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালনের আয়োজক দেশ ছিল আলজেরিয়া।

আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্ত ও রক্ত উপাদানের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রতি মাসে ১ থেকে ৩ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও রক্তস্বল্পতা, প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, বড় অপারেশন, দুর্ঘটনা সহ নানা কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের এ চাহিদা পূরণে আমাদের স্বেচ্ছা রক্তদানের কোনো বিকল্প নেই।

শুধুমাত্র সামান্য একটা সুচের ভয়কে অতিক্রম করতে পারলেই একজন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তি প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর রক্ত দান করতে পারেন। সাধারণত ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি প্রতি চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন। রক্তে নতুন নতুন কোষ উৎপন্ন হয় এবং সেই উৎপন্ন রক্ত ৪ মাস পর মারা যায়। রক্তদানের মধ্য দিয়ে একজন মুমূর্ষ ব্যক্তির যেমন জীবন বাঁচে তেমনি যে ব্যক্তি রক্তদান করে তার সেও উপকৃত হয়। কারণ রক্ত দেওয়ার আগে রক্ত পরীক্ষা করা হয় এবং সেই পরীক্ষার রক্তদাতা রক্ত কোন সমস্যা থাকলে সেটিও বিনামূল্যে পরীক্ষা করার একটি সুযোগ তৈরি হয়। আমি রক্তদান সম্পর্কে জানার পর ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথম রক্তদান করি এবং সেই ২০১৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত আমার ১৭ বার রক্তদান করার সৌভাগ্য হয়েছে।

১৪ জুন এই দিনটি উদযাপনের একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন জন্মগ্রহণ করেন অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার। তিনি ১৯০০ সালে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই অবদানের জন্য, কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় । রক্তদাতা দিবসটি বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারকে উৎসর্গ করে তার জন্মদিন ১৪ জুন পালন করা হয়।

Scroll to Top