বইয়ের নামঃ“শিশুর বিকাশে চাই ভালোবাসা, শাস্তি নয়”।
লেখকঃ বিলকিস নাহার
“শিশুর বিকাশে চাই ভালোবাসা, শাস্তি নয়” বইটি সকলের পড়া উচিত। বিশেষ করে মা-বাবার, আরো বিশেষভাবে বললে মায়েদের। বইটি লিখেছেন বিলকিস নাহার, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বইটিতে মায়ের নিরাপদ গর্ভধারণ থেকে শুরু করে শিশু বড় হওয়া পর্যন্ত করণীয় সম্পর্কে সুন্দর দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যা সবকিছু আমার এই ছোট লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তবুও আমি অনেক শিশুকে কাছ থেকে দেখা এবং বইটির আলোকে শিশুদের সম্পর্কে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছি।
মূল কথাঃ অনেকের ভিতর একটা ধারনা প্রতিষ্ঠিত আছে যে, শিশুকে আদরের পাশাপাশি শাসনও করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনি শাসন কেন করবেন? শিশুর অন্যায় বলতে তো কিছু নেই, শিশু খেলাধুলা বা দুষ্টুমি যাই করে সেটাই তার কাজ। শিশুদের উপর শাস্তি হচ্ছে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারের মত, যা আমরা খুব সাবলীলভাবে করে থাকি। শিশুর কাজ খেলাধুলা করা। চিন্তা করে দেখুন তো, শিশুর বোঝার বয়স হওয়ার আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একজন মা তার শিশুকে কখন প্রহার করে? যখন মায়ের মন খারাপ থাকে, সাংসারিক কোন ঝামেলা বা পারিবারিক কোন কারনে বিরক্ত থাকেন। এইসব বিষয়ের প্রভাবটা গিয়ে পরে শিশুর উপর। ভেবে দেখুন, আপনার শিশুটি একটু আগে খেলতেছিলো কিন্তু আপনি হটাৎ করে তাকে প্রহার করলেন! তখন তার অবুঝ মন ভেবে পায় না যে মা আমাকে কেন মারল। তখন এটি তার জন্য মানসিক কষ্ট হয়ে দাঁড়ায় এবং শিশু হীনমন্যতায় ভোগে। যার ফলে শিশুর সুন্দর ও স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্ৰন্থ হয়। আপনি যদি কোন প্রকার শাস্তি ছাড়া আপনার শিশুকে একটু বড় করতে পারেন তবে ১০/১২ বছর বয়স হলে কোনো কিছু বুঝিয়ে বললে সে এমনিতে বুঝতে পারবে।
আপনার শিশুকে কখনো অন্য কাউকে শাসন বা অনধিকার চর্চা করার সুযোগ দিবেন না কারণ আপনার শিশুকে আপনার চেয়ে ভালো কেউ বুঝে না। অন্য কেউ আপনার শিশুর সাইকোলজি বুঝবে না। অনেকে শিশুকে চিমটি বা অনেকভাবে রাগিয়ে থাকে, এই কাজটি কখনো করতে দেওয়া যাবে না। কেউ করতে চাইলে এটি কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে। কারণ এটি শিশুর ব্যক্তিত্ব আঘাত হানে। তখন শিশু বুঝতে পারে যে তাকে অসম্মান করা হচ্ছে। এই বিষয়টি ভবিষ্যতে তাকে অন্যকে অসম্মান করতে শেখাবে। আপনি মানেন আর না মানেন আপনি যদি চান আপনার শিশু অন্যকে সম্মান করুক তবে তার সম্মানে যেন কিছুতেই আঘাত না লাগে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
আর শিশুকে ভালো কোনো কিছু বলে শেখাতে যাবেন না, ভালোটা নিজে শিখবেন এবং নিজে করবেন তখন শিশু সেটা অনুকরণ করবে। ভালো কোন কিছু আপনি বলবেন আর সেটি রপ্ত হয়ে যাবে তা একদমই নয়। ভালো কাজটি প্রতিনিয়ত করার মধ্য দিয়ে নিজের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে যা শিশুও শিখবে। শিশুর মানসিক বিকাশ এবং শেখানোর লক্ষে সৃজনশীল খেলনা সামগ্রী দিতে হবে এবং শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে খেলনার ধরণ পাল্টাতে হবে। একটা খেলনা থেকে শিশুর শেখা হয়ে গেলে তখন সে আর সেটি দিয়ে খেলতে চায় না কারণ সে নতুন কিছু শিখতে চায় এবং নতুন নতুন আনন্দ নিতে চায়।
আধুনিক বিশ্বে শাস্তি ছাড়া শিশুকে সুশৃংখল করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। স্কুলে শাস্তি বন্ধ করার পাশাপাশি বাড়িতে মা বাবার শাস্তি বন্ধ করতে নেওয়া হচ্ছে নানান পদক্ষেপ। ২০০৪ সাল নাগাদ তেরোটি দেশে শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে আর এই কাজটি সবার আগে করেছে সুইডেন ১৯৭৯ সালে। এছাড়াও অনেক দেশ শিশুদের উপর শাস্তি বন্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ১৯৮৫ সালে ফ্যামিলি রিসার্চ ল্যাবরেটরী অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যামপশায়ার এর একটি সার্ভে রিপোর্টে বলা হয়েছে, “যেসব শিশুরা শৈশবে শারীরিক শাস্তি পায় তাদের মধ্যে স্বল্পমাত্রার থেকে উচ্চমাত্রায় ডিপ্রেশন দেখা যায়, এ শিশুদের বেলায় যে কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া বা রেসপন্স করার ক্ষমতাও কমে যায়। শুধু তাই নয় শাস্তি শিশুর শিক্ষন ক্ষমতাকেও খর্ব করে। একই গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুদের প্রায় প্রতি সপ্তাহে শারীরিক শাস্তি পেতে হয় তারা নিজের ভাইবোন এমনকি অন্য শিশুদের মারধর করে এবং তারা মা বাবার কথা শোনে না, কোন ধরনের নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করে না। এমনকি পারিবারিক অশান্তি এবং শারীরিক শাস্তি দেওয়া শিশুদের বেলায় অপরাধপ্রবণতা তৈরী হয় অনেক বেশি। মারধর না করে মমতা দিয়ে ভালোবেসে বোঝালে যেকোনো বিষয় শিশু শেখে অনেক তাড়াতাড়ি। যা শিশুকে মেধাবী এবং দায়িত্বশীল করে তোলে”।
সুতরাং শিশুর বিকাশে চাই ভালোবাসা, শাস্তি নয়।
(ধন্যবাদ)
লেখাঃ ইকবাল হোসেন