নেলসন ম্যান্ডেলা কে নিয়ে বক্তৃতা

Spread the love

আধুনিক দক্ষিণ আফ্রিকার জনক খ্যাত নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার একজন বর্ণবাদ বিরোধী বিপ্লবী এবং রাজনৈতিক নেতা। তিনি ১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই এমভেজোতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যা তখন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের অংশ ছিল।

অত্যাচারী সরকারকে ছিন্নভিন্ন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন। ম্যান্ডেলা ১৯৯৩ সালে বর্ণবাদী শাসনকে শান্তিপূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন।

শিক্ষা- দীক্ষাঃ তিনি যেহুতু একজন খ্রিস্টান ধর্মালম্বী তাই তিনি গির্জা সংলগ্ন একটি খ্রিস্টানদের মেথডিস্ট মিশন স্কুলে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি ইংরেজি, জোসা, ইতিহাস এবং ভূগোল অধ্যয়ন করেন। প্রাসাদে আসা বয়স্ক দর্শনার্থীদের দ্বারা বলা গল্প শুনে নেলসন নিজের মনে আফ্রিকান ইতিহাসের প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলেছিলেন এবং একজন পরিদর্শক প্রধানের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বক্তব্য দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ম্যান্ডেলা উইটওয়াটারসরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। সেখানে তিনি ছিলেন একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান ছাত্র ফলে তাকে বর্ণবাদের সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে, তিনি উদারপন্থী এবং কমিউনিস্ট ইউরোপীয়, ইহুদি এবং ভারতীয় ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্ব করেন, তাদের নাম ছিল জো স্লোভো এবং রুথ ফার্স্ট যার প্রভাবে ধীরে ধীরে তিনি ক্রমবর্ধমানভাবে রাজনীতিক্ষেত্রে পা বাড়ান।

রাজনৈতিক কার্যকলাপ এবং নেলসন ম্যান্ডেলা যেভাবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেনঃ
উইটওয়াটারসরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অধ্যয়নকালীন সময় নেলসন ম্যান্ডেলা ঔপনিবেশিক বিরোধী এবং আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িত হন । ১৯৪৩ সালে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের “আফ্রিকানিস্ট” শাখায় যোগদান করেন। শ্বেতাঙ্গ সরকার বর্ণবৈষম্য প্রতিষ্ঠা করে, যা ছিল বর্ণগত বিচ্ছিন্নতামূলক একটি ব্যবস্থা যাতে শ্বেতাঙ্গরা সুযোগ-সুবিধা পায় । ম্যান্ডেলা এবং এএনসি তা উৎখাতের জন্য নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছিল। পরবর্তী সময় তিনি এএনসি-র ট্রান্সভাল শাখার সভাপতি নিযুক্ত হন।

বেশ কিছু সময় কেটে যাওয়ার পর ১৯৫২ সালে ডিফিয়েন্স ক্যাম্পেইন এবং ১৯৫৫ সালের কংগ্রেস অফ দ্য পিপল-এ তাঁর সম্পৃক্ততার জন্য ম্যান্ডেলা বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তবে তিনি বারবার রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপের জন্য গ্রেফতার হন । ১৯৫৬ সালের রাষ্ট্রদ্রোহিতা বিষয়ক একটি বিচারে ব্যর্থ হন তিনি । তিনি গোপনে দক্ষিণ আফ্রিকান নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি তে যোগ দেন। যদিও নেলসন প্রাথমিকভাবে অহিংস প্রতিবাদে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন, কিন্তু ১৯৬১ সালে জঙ্গি সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হন এবং সরকারের বিরুদ্ধে “উমখন্ত উই সিজিউই” নামক জঙ্গী দলের একটি নাশকতামূলক প্রচারণার নেতৃত্ব দেন। ১৯৬২ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং কারাবদ্ধ করা হয় । পরে আবার রাষ্ট্রকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রের জন্য ম্যান্ডেলাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
দীর্ঘ ২৭ বছর অতিবাহিত হয় এরপর ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ এবং জাতিগত গৃহযুদ্ধের আশঙ্কার কারণে রাষ্ট্রপতি এফ. ডব্লিউ ডি ক্লার্ক তাকে ১৯৯০ সালে মুক্তি দেন। পরবর্তী সময়ে ম্যান্ডেলা এবং ডি ক্লার্ক বর্ণবাদের অবসানের জন্য আলোচনার প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেন, যার ফলস্বরূপ ১৯৯৪ সালের বহুজাতিক সাধারণ নির্বাচনে ম্যান্ডেলা ANC-কে নেতৃত্ব দেন। সেখানে নেলসন বিজয়ী হন এবং রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হন, যার মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ নিপাত চায় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আদর্শগতভাবে নেলসন একজন আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক, তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর, ৯৫ বছর বয়সে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার
জোহানেসবার্গে মৃত্যুবরণ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top