Spread the love

আলোর ফেরী একটি প্রযুক্তিভিত্তিক বই শেয়ারিং সেবা। এই পদ্ধতিতে পাঠক যেকোনো স্থান থেকে আলোর ফেরী অ্যাপের মাধ্যমে জিপিএস ব্যবহার করে তার নিকটবর্তী পাঠাগারের বইসহ যাবতীয় তথ্য জানতে পারে। পাঠক তার পছন্দের বইটি খুঁজে পড়তে চেয়ে অনুরোধ পাঠাতে পারে। অতঃপর পাঠাগারের ব্যবস্থাপনায় (গাড়ি/সাইকেলের মাধ্যমে) পাঠকের কাছে বইটি পৌঁছে দেয় এবং বইটি পড়া শেষে ফেরত নেয়। পাঠাগার কর্তৃপক্ষ জানতে পারে কোন পাঠকের কাছে কি বই রয়েছে, কবে ফেরত দিবে, কোন মাসে কতটি বই ইস্যু হয়েছে এবং কতটি বই ফেরত এসেছে ইত্যাদি। এতে নেটওয়ার্কিং সুবিধা থাকায়  বইয়ের রিভিউ, পোস্ট, কমেন্ট ও লাইক এর মাধ্যমে বই পড়ার মতামত প্রকাশ করতে পারে। ফলে খুব সহজেই পাঠক ও পাঠাগারের মধ্যে বন্ধন তৈরিতে সাহায্য করে। 

আলোর ফেরী একটি নমনীয় ডিজাইন, এই সেবা যেকোন এলাকা জুড়ে বিস্তৃত করা যায়। ফলে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বই পড়ার কার্যক্রম সমগ্র দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায়। নিম্নে আলোর ফেরীর মাধ্যমে এলাকা ভিত্তিক বই সেবা প্রদানের চিত্র দেওয়া হলঃ

আলোর ফেরী অ্যাপের বিশেষ ফিচার সমূহঃ

  • কিউআর-কোড পদ্ধতিতে পাঠাগার, পাঠক ও বইয়ের তথ্য দ্রুত একসেস করা।কিউআর-কোড ব্যবহার করে স্মার্ট হাজিরা পদ্ধতি।
  • বই ইস্যু ও সংগ্রহ করা এবং ইস্যুকৃত বইয়ের তালিকা জানা।
  • দৈনিক, মাসিক এবং বাৎসরিক বই ইস্যু ও সংগ্রহের স্ট্যাটিসটিকস নির্ণয় করা।সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক বই পড়ার সংখ্যায় সেরা পাঠক নির্বাচন করা।পাঠাগারের বই ব্যবস্থাপনা, সদস্য ব্যবস্থাপনা, ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা ও অর্থ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
  • পাঠাগারের নিজস্ব প্রোফাইল বা পেইজ, উক্ত পেইজ থেকে পাঠাগারের সকল বই, পাঠকসহ সমসাময়িক যাবতীয় তথ্য জানা।
  • সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সুবিধা থাকায় পোস্ট, কমেন্ট ও লাইকের মাধ্যমে বিভিন্ন আলোচনা করা।
  • অনলাইন পেমেন্ট এর মাধ্যমে সদস্য ও দাতাদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করা। পাঠাগারের সদস্যদের রক্তের গ্রুপ জানা ও ব্যবস্থাপনা করা। 
  • পাঠাগার ও পাঠকের পারফরম্যান্স নির্ণয় করা। 
  • খুব সহজেই নিকটবর্তী পাঠাগার ও পাঠাগারের বই খুঁজে বের করা যায়।নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আপডেট পাঠাগার ও পাঠকে জানিয়ে দেওয়া।

আলোর ফেরী অ্যাপের ডাউনলোড লিংকঃ https://play.google.com/store/apps/details?id=com.provatsoft.alorferi&hl=en

আলোর ফেরীর ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের (প্রস্তাবিত) গাড়ির ডিজাইনঃ

 

 

Diagram Description automatically generated

 

 

ছবিঃ আইওটি যুক্ত আধুনিক ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার।

 

 

গাড়ির বৈশিষ্ট্যঃ
১) গাড়িতে সংযুক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওয়াইফাই এর মাধ্যমে পাঠকদের মোবাইলে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া হবে যাতে পাঠক আলোর ফেরী অ্যাপের মাধ্যমে বুকশেলফের কোন তাকে কি বই রয়েছে বই খুঁজে বের করতে পারবে।
২) সংক্রিয়ভাবে জিপিএস এর মাধ্যমে গাড়ির লোকেশন এবং ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি/ভিডিও সার্ভারে আপডেট হবে ফলে কর্তৃপক্ষ গাড়ির অবস্থান জানতে পারবে।
৩) আলোর ফেরী অ্যাপের মাধ্যমে জিপিএস ব্যবহার করে গাড়ির অবস্থান জানতে পারবে।
৪) গাড়িতে সন্নিবেশিত কিউআর-কোড স্ক্যান করে সমস্ত বইয়ের তথ্য অর্থাৎ কোন সেলফে কি বই রয়েছে জানতে পারবে।
৫) সৌর প্যানেলের মাধ্যমে ব্যাটারি রিচার্জ করার পরিবেশগত স্থায়িত্বকেও নিশ্চিত করে।

কার্যক্রমসমূহ

১) প্রযুক্তিভিত্তিক ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার সেবাঃ

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বই ইস্যু, বই সংগ্রহ, বই ব্যবস্থাপনা এবং পাঠক ব্যবস্থাপনা করা হয়। এই পদ্ধতিতে পাঠক ঘরে বসে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বই পড়তে চাওয়ার অনুরোধ পাঠাতে পারে। অতঃপর ভ্রাম্যমান পাঠাগার (সাইকেল বা গাড়ি) এর মাধ্যমে পাঠকের নিকট বই পৌঁছে দেওয়া ও সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে নির্ধারিত এলাকায় ও নিকটবর্তী স্কুলে সাইকেলের মাধ্যমে পাঠকদের বই পৌঁছে দেওয়া ও সংগ্রহ করা হয়। গাড়ির মাধ্যমে এই সেবা ইউনিয়ন ও উপজেলাব্যাপী বর্ধিত করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। ভবিষ্যতে এই সেবা সারা দেশব্যাপী প্রসারিত করা হবে।

 

২) পাঠাগার ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমঃ

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাঠাগারগুলোকে আলোর ফেরী অ্যাপের মাধ্যমে একই নেটওয়ার্কের যুক্ত করে প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে পাঠকদেরকে পাঠাগার মুখী করার লক্ষ্যে প্রচার–প্রচারণা চালানো হয়। আগ্রহী পাঠাগারগুলোকে আলোর ফেরী অ্যাপের মাধ্যমে পাঠাগার ডিজিটালাইজেশন করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে সহযোগিতা করা হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১০০ এর অধিক পাঠাগার আলোর ফেরীর অ্যাপে যুক্ত হয়েছে।  আলোর অ্যাপে সক্রিয় এবং ৫০০ এর অধিক বই যুক্তকারী পাঠাগারগুলোকে সনদ ও ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে পাঠাগার ডিজিটালাইজেশনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সেলুন পাঠাগার সেবাঃ

সেলুনে অপেক্ষমান কাস্টমার অলস বসে না থেকে বই পড়ে সময় কাটাতে পারে। বর্তমানে বাহেরচর বাজারের ৩টি সেলুনে এই সেবা চালু রয়েছে। সেলুন পাঠাগারগুলোতে প্রতিমাসে পূর্বের বইগুলো পাল্টে নতুন বই রাখা হয় যাতে কাস্টমার নতুন নতুন বই পড়তে পারে। ধাপে ধাপে অন্যান্য বাজারেও সেলুন পাঠাগার কার্যক্রম প্রসারিত করা হবে। কোন সেলুন পাঠাগারে কি বই রয়েছে তা আলোর ফেরী অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে।

৪) পাঠাগারে পাঠ সেবাঃ

পাঠাগারে বসে পাঠক বই, পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন পড়তে পারে। এছাড়াও পাঠক পাঠাগার থেকে বই সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে পড়তে পারে।

৫) বিভিন্ন দিবস উদযাপন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণঃ

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহ বিভিন্ন দিবসে আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা সহ নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এবং প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

মাসিক আড্ডা (অনলাইন এবং অফলাইন):

প্রতিমাসে বই পড়া নিয়ে বক্তৃতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে আলোচনার আয়োজন করা হয়।

৭) সচেতনতা কার্যক্রমঃ

বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম যেমনঃ মাদক বিরোধীবাল্যবিবাহ রোধপরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনসহ নানা রকম কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়।

৮) দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমঃ

পাঠকদের মেধা ও দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম যেমনঃ স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে যাতে শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

৯) শিশুদের গেইম কর্নারঃ

শিশুদের আনন্দময় পরিবেশ প্রদানের লক্ষ্যে পাঠাগারে রয়েছে বিভিন্ন সৃজনশীল খেলার ব্যবস্থা। যাতে শিশুরা বই পড়ার পাশাপাশি খেলার মাধ্যমে পাঠাগারে আনন্দের সাথে সময় কাটাতে পারে এবং মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে।

১০) বৃত্তি প্রদানঃ

পাঠাগারের বই আদান–প্রদানের দায়িত্বে নিযুক্ত শিক্ষার্থীকে প্রতিমাসে তার পড়াশুনার খরচের সহায়তার হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বৃত্তি হিসাবে প্রদান হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার সহায়তার জন্য বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

১১সাঁতার প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমঃ

পানিতে ডুবে মৃত্যু বাংলাদেশে একটি নীরব ঘাতক। প্রতিদিন গড়ে ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে প্রাণ হারান। যাদের ৩০ জনেরই বয়স পাঁচ বছরের কম। এই মৃত্যুর মিছিল থেকে অন্ততপক্ষে হলেও যেন কিছু জীবন বাঁচাতে পারি সেই লক্ষ্যে আলোর ফেরী পাঠাগারের উদ্যোগে কিছু লাইফ জ্যাকেট নিয়ে শুরু করা হয় “শিশু–কিশোরদের বাধ্যতামূলক সাঁতার শিখন কার্যক্রম“।

Scroll to Top